You are currently viewing গ্রন্থঃ The Hero of Thousand Faces

গ্রন্থঃ The Hero of Thousand Faces

লেখক জোসেফ ক্যাম্পবেল

পাঠ প্রতিক্রিয়া আদনান সৈয়দ

 প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নানারকম মিথ আশ্রিত গল্প নিয়ে জোসেফ ক্যাম্পবেলের বিখ্যাত গ্রন্থ “The hero with a thousand faces’। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত গল্পগুলোর উপর চোখ রাখলে এই পৃথিবীর রক্তমাংসের মানুষের দৈনন্দিন যাপিত জীবনে মিথ কীভাবে জড়িয়ে আছে এবং একই সঙ্গে মানুষ সেই মিথকে তাদের অন্তরাত্মায় লালন করে কীভাবে প্রতিদিনের জীবনে পথ বেছে নিয়েছে সেই খোঁজটি খুঁজে পাওয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে, না আমরা কেউই কিন্তু এ মিথের জগতের বাইরের কেউ নই। আমাদের সবারই রয়েছে কিছু অদেখা এবং অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসের কিছু গল্প আর কিছু অভিজ্ঞতাও।

১৯৪৯ সালের শেষের দিকে প্রকাশিত এই গ্রন্থটিতে মিথের শক্তির পাশাপাশি সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কীভাবে তার সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন আরেক জগৎ নির্মাণ করেছে সেসবের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। জোসেফ ক্যাম্পবেল সময়ের সাথে সাথে পৌরণিক বীরদের জীবনগাঁথাগুলো কীভাবে মানুষের আত্মা এবং শরীরে মিশে যেতে পারে তাও নিখুঁতভাবে নির্মাণ করেছেন এ গ্রন্থটিতে। লেখক সময়ের মাপকাঠিতে মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে তুলে এনেছেন এবং পাশাপাশি মানুষের জীবনের সাথে প্রকৃতি এবং মিথের ঐকতানকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরেছেন।

গ্রন্থের শুরুতেই লেখক মিথ নিয়ে আমাদের আত্মায় গেঁথে থাকা কিছু বদ্ধমূল ধারণার বিষয় নিয়ে অবতারণা করেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন আমাদের বদ্ধমূল এ ধারণাগুলো মূলত তিন ধরনের আধ্যাত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থানের উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম অবস্থানটি হলো আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে দীর্ঘদিন আমাদের আত্মায় লালন করা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিশ্বাস। দ্বিতীয়ত মানুষের শারীরিক উপস্থিতির সঙ্গে আধ্যাত্মিক জগতের সম্পর্ক স্থাপন এবং তৃতীয়ত মিথের আলোকে মানুষের আধ্যাত্মিক অস্তিত্ব এবং শারীরিক অস্তিত্বের প্রকাশ।

ক্যাম্পবেল গ্রন্থের শুরুতেই কবুল করেছেন যে এ গ্রন্থটি লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর আধ্যাত্মিক জগৎকে আবিষ্কার করা। মিথের দুনিয়ার সঙ্গে বর্তমান এ দুনিয়ার একটি যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া এবং পাশাপাশি এই দুটোতে একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করা। এ কাজগুলো সম্পাদন করতে গিয়ে লেখক মিথে উল্লেখিত বীরদের জীবন এবং তাদের কাজগুলোকে তুলে এনেছেন। তাদের আলোকিত জীবন, শারীরিক এবং আত্মিক শক্তির খোঁজকেও তিনি সমানভাবে এ গ্রন্থে ব্যবহার করেছেন। এ গ্রন্থটির বেশির ভাগ পাতাজুড়েই রয়েছে মিথের বীরদের বাণী, তাদের বীরত্বগাথার গল্প। ক্যাম্পবেল স্বীকার করছেন যে মানুষের শক্তি সীমাহীন কিন্তু পাশাপাশি মিথের শক্তিও অসীম।

তিনি এই গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন যে বর্তমান এই বিশ্বের মানুষ তাদের মূল সংস্কৃতি এবং বিশ্বাস থেকে অনেকটুকু দূরে সরে গেছে। প্রকৃতি আর মিথের শক্তির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মানুষের শক্তি আর অভিজ্ঞতা ধিরে ধিরে গৌণ আর ফ্যাকাসে হয়ে পড়েছে। এ দূরত্ব হওয়ার কারণে মানুষ এখন প্রকৃতির সাথে মানুষের গোপন রহস্যটিই আর বুঝতে পারে না। আর সে কারণে মানুষ এখন প্রকৃতির ইশারা এবং রূপক বাণীকে তার আত্মায় আর স্থান দিতে পারছে না।

‘The hero’s adventure’ গ্রন্থটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একজন মানুষের যাত্রা শুরু হয় এই পৃথিবী থেকে এবং সে মানুষটি ধিরে ধিরে প্রকৃতির শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উঠেন।

আফ্রিকার কঙ্গো এলাকার পিগমি আদিবাসী মানুষদের মধ্যে একটি খুব জনপ্রিয় মিথ চালু আছে। মিথটা হলো এক বালক বনের মধ্যে শিকার করতে যেয়ে সুন্দর একটি পাখি খুঁজে পেল। সেই পাখিটি সুন্দর করে গান গায়, শিষ দেয়। বালকটি অনেক উৎসাহে গানের পাখিটাকে বাড়ি নিয়ে এলো। বাড়িতে এনে সে তার বাবাকে বলল পাখিটির যত্ন করতে, তার জন্য খাবার জোগাড় করতে। কিন্তু বাবা ছিল ভীষন কিপটে। সে পাখির কোনো দেখভাল তো করলই না বরং পাখিটাকে গলা টিপে মেরে ফেলল। সেই গানের পাখিটিকে মেরে ফেলা হলো আর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটলো পাখির সুরেলা কন্ঠের গানটিও। প্রকৃতি এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। বনদেবতা এই ঘটনায় খুব রুষ্ট হলেন। তিনি পৃথিবী থেকে গানকে উঠিয়ে নিল। পৃথিবী গানশূন্য হলো,  পৃথিবী থেকে ভালোবাসা উঠে গেল!

পৃথিবী থেকে ভালোবাসা উঠে গেল! সেই থেকেই পৃথিবীর মানুষের মধ্যে যতসব অশান্তি।  এই অশান্তি এখন আমাদের চারপাশে জাপটে ধরেছে। মৃত্যুই এর থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায়।

হেপি রিডিং..

Leave a Reply