গল্পসমগ্র
আল মাহমুদ
প্রকাশকঃ অনন্যা
গ্রন্থ পরিচিতিঃ আদনান সৈয়দ
একটা সোনালি সময় ছিল যখন আমি কবি এবং গল্পকার আল মাহমুদে ভীষনভাবে ডুব দিয়েছিলাম। আল মাহমুদের কবিতা আমাকে চুম্বুকের মত টানে। আহা কি সেই উপমা! ‘ ডাবের মত চাঁদ উঠেছে ঠান্ডা গোলগাল।’ চাঁদটা তখন কল্পনার চোখে অন্যরকম হয়ে ধরা দেয়। মনে হয় সত্যিইতো দূর থেকে চাঁদটা দেখতে কতই না ঠান্ডা! সন্দেহ নেই তাঁর ‘সোনালী কাবিন’ কবিতাটি বাংলা কবিতার একটি ক্লাসিক। ডানে বামে তাকাই না। রাস্তায় উদাস মন নিয়ে হাটি । অন্তরাত্মায় তখন জায়গা করে নিয়েছে, ‘ গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল, কবুল।’
তাঁর গল্পে এবার চোখ রাখা যাক। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো? তাঁর গন্ধবণিক, সৌরভের কাছে পরাজিত, পশর নদীর গাঙচিল, ময়ূরীর মুখ, মীর বাড়ির কুরসিনামা , জলবেশ্যা অথবা পানকৌড়ির রক্ত বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। তাঁর আত্মজৈবনিক উপন্যাস( নাকি আত্মজীবনী?) ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ এক কথায় অসাধারণ! কেমন ছিল কবি আল মাহমুদের শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের শুরুটা? মৌড়াইলের মোল্লাবাড়িতে তাঁর বেড়ে উঠা, রঙিন শৈশব, ছোট্ট মফস্বল শহর থেকে বেরিয়ে শহর থেকে বন্দরের কত কত গল্প এই গ্রন্থটিতে!। এক কিশোরের চোখ দিয়ে দেখা আমাদের সাদা কালো সমাজ আর সেই সমাজের লাল নীল আলো আধাঁরি সময়! আত্মজৈবনিক এই উপন্যাসে ধরা আছে এক কিশোরের চোখে দেখা বাংলার রূপ-গন্ধময় দৃশ্যপট, আলো-আঁধারি সময়। আহা! তাঁর লেখায় আমাদের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবর্গের মানুষের পকেটে তুলে রাখা স্বপ্নের সুগন্ধি রুমালের ঘ্রাণ পাই। কল্পনায় জলবেশ্যাদের ছবি আঁকি। আর গন্ধবণিকের সেই মন্তু নানা? মন্তু নানার বাসর রাতের আতরের সেই ঘ্রাণ আমি এখনো পাই!
ধারণা করি একজন কবির হাত দিয়ে এত ভালো ভালো গল্প খুব কম লেখকই হয়তো লিখতে পেরেছেন।
আল মাহমুদের গল্পগুলো একত্র করে ‘গল্পসমগ্র’ একটি অসাধারণ গ্রন্থ। যাঁরা গল্প ভালোবাসেন, গল্প নিয়ে কাজ করেন এবং গল্পে হাত পাকাতে চান তাদের জন্য এই গ্রন্থটি অবশ্য পাঠ্য।
আজ জুলাই ১১। কবি আল মাহমুদের জন্মদিন। মন্তু নানার আতরের ঘ্রাণে নিতে নিতেই প্রিয় কবি এবং গল্পকার আল মাহমুদকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।