তিতাস ছবি ও কবিতায়
লেখকঃ ওবায়দুল্লাহ মামুন
প্রকাশক: ঐতিহ্য,ঢাকা
অ্যালবামটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পি কাইয়ুম চোধুরী।
মূল্য পাঁচশত টাকা(ইউএস দশ ডলার)
পাঠ প্রতিক্রিয়া করেছেন আদনান সৈয়দ
আমাদের নদী বিধৌত বাংলার জলজ মানুষের জীবনের সাথে নদীর এক অবিচ্ছিন্ন আত্মিক যোগাযোগ আছে। নদীর সাথে রয়েছে আমাদের প্রতিদিনের মান অভিমানের পালা, নদীর সাথে চলে আমাদের নিত্য দিনের কথা বলা। তাইতো দেখতে পাই এই নদী এবং আমাদের মন এক হয়ে গেছে সেই কবে কোন কালে! আমাদের জীবন, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের ভালোবাসা আর আমাদের নিত্য দিনের হাসি কান্নার গল্প বাংলার এই নদ—নদীর সাথে একই বিনি সুতার মালায় কখন অনেক আগেই আমাদের মনের অজান্তে গাঁথা হয়ে আছে। বাংলায় জালের মত বিস্তৃত এই নদী আমাদের মানষের জীবনে খুব কাছের কেউ বলেই হয়তো নদী আমাদের নিত্য ভাবায়, কাঁদায় আবার বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে বুকেও তুলে নেয়। তাই হয়তো আমাদের মননে, সংস্কৃতিতে, ছায়াছবি এবং আলোকচিত্রে, গানে, গল্পে—কাবিতায় মোট কথা আমাদের বাঙালির করোটির প্রতিটি রন্ধে্র রন্ধে্র নদী নমের এই ছোট্ট শব্দটি এক বিশাল জায়গা জুড়ে বসে আছে।
তিতাস ছবি ও কবিতায় বিশিষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পী ওবায়দুল্লাহ মামুনের তিতাস নদীর ওপর কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র ও কবিতা নিয়ে একটি অ্যালবাম। দূর্লভ বললাম এ কারনেই যে অ্যালবামে উপস্থিত তিতাসের অনেক ছবিই আজ আর বাস্তব তিতাস নদীর সাথে খুজে পাওয়া যাবে না। এখানেই ওবায়দুলাহ মামুনের কৃতিত্ব। একটা নদীর চলমান ইতিহাস ধরে রাখা সহজ কোন কথা নয়। কিন্তু মামুন সে কাজটি যথেষ্ঠ মুন্সিয়ানার সাথেই করতে পেরেছেন তাঁর তিতাস ছবি ও কবিতায়। আলোকচিত্রের পাশাপাশি তিতাস কে নিয়ে দু বাংলার কবিদের ষোলটি কবিতা নি:সন্দেহে অ্যালবামটির একটি বাড়তি সৌন্দর্য্য। আর সবকটা কবিতাই ইংরেজীতে অনুদিত হয়েছে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর দক্ষ হাত দিয়ে।
অ্যালবামটিতে স্থান পাওয়া তিতাসের উপর বেশ কয়েকটা আলোকচিত্রের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন আসতেই পারে। শুধু বার বারই মনে হয়েছে যে এই আলোকচিত্র গুলো তিতাস ছবি ও কবিতার মত একটি সুন্দর অ্যালবমে সংযোজন না ঘটলেও অ্যালবামটির গুনগত মানের কোন অংশেই ব্যাহত হত না। আর বাঁধাই এবং কাগজের মানও কিন্তু খুব একটা উন্নত মানের নয় হয় নি। যে কোন ধরনের অ্যালবামের মত প্রকাশনার ক্ষেত্রে যে ধরনের উন্নত মানের কাগজ ব্যাবহ“ত হয় তিতাস ছবি ও কবিতায় কিন্তু তা হয় নি। তাছাড়া অ্যালবামটির মুল্য পাঁচশত টাকা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার চেয়ে একটু বেশীই বলে মনে হয়। বইটি হাতে নিলে বেশ বোঝাই যায় যে প্রকাশক একটু হুটহাট করেই বইটি বেড় করে ফেলেছেন। পরবর্তী সংস্করনে লেখক এবং প্রকাশক এ বিষয়টার দিকে একটু নজর দিবেন আশা করি।
ওবায়দুল্লাহ মামুনকে আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছুই নেই। তিনি যে অস্থি মজ্জায় একজন জাত আলোকচিত্র শিল্পী তা আবারো প্রমান করলেন তার প্রকাশীত অ্যালবাম ‘তিতাস ছবি ও কবিতা’ অ্যালবামটির মধ্য দিয়ে। তিতাস ছবি ও কবিতায় গ্রন্থটিতে তিতাস পারের মানুষের সুখ—দুখ, হাসি—কান্না—বিয়ে, তিতাস নিয়ে তিতাস পারের মানুষের স্মৃতিকথা, তিতাস পারের জেলে এবং মাঝিদের সংগ্রামী জীবনের কথা, সবচেয়ে বড় কথা তিতাসকে আঁকড়ে ধরে মানুষ, পাখি আর গাছপালার বেঁচে থাকার এক সুন্দর শৈল্পিক চিত্র ফুটে উঠেছে।
আগেই বলেছি ওবায়দুল্লাহ মামুন একজন জাত আলোকচিত্র শিল্পী। তাঁর ক্যামেরায় তিতাস যে যথার্থ ভাবেই বন্দী হবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের অনেক নদী আছে যা শুধুমাত্রই নাম সর্বস্য।বাংলা থেকে এই নদী গুলোর ইতিহাস মুছে যাবার আগেই নদীর ইতিহাসগুলো লিখে রাখা খুবি প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে আলোকচিত্র হতে পারে সবচেয়ে প্রধান মাধ্যম। মামুন কে ধন্যবাদ জানই তিতাস এর উপর এমন একটি সুন্দর অ্যালবাম আমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য। অ্যালবামটিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী অনুবাদের কারণে এর পাঠক বিস্তৃতি বাংলার সীমানাকেও যে অতিক্রম করবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।