You are currently viewing Reading Lolita in Tehran

Reading Lolita in Tehran

Reading Lolita in Tehran

লেখকঃ Azar Nafisi

প্রকাশক: Random House, New York

পাঠ প্রতিক্রিয়া আদনান সৈয়দ

ইরানের মত কড়া ইসলামি নিয়ম কানুনের দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্লাদিমির নবকভের ‘ললিতা’ পাঠ সহজ কোন কথা নয়! একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কড়া ইসলামিক শাষন অন্যদিকে কিছু উৎসাহি ছাত্র/ছাত্রীদের পশ্চিমা সাহিত্য প্রীতি সব মিলিয়ে অসাধারণ স্মৃতিচারণ মূলক গ্রন্থ “রিডিং ললিতা ইন তেহরান।” লেখক আজার নাফিসি।

আজার নাফিসি সম্পর্কে একটু জানা যাক। তিনি বর্তমানে আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়ান। ১৯৭৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেলেশিপ নিয়ে তিনি ইউইনিভার্সিটি অব তেহরানে গিয়েছিলেন সাহিত্যের অধ্যাপক হয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যেয়ে বোরখা পরতে অস্বীকৃতি জানলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তীতে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি যেন বিশ্ববিদ্যালয় কক্ষে আর না আসেন। ‘আমি তাদেরকে বোঝালাম ক্লাসে বোরখা পরিনা সত্য কথা কিন্তু যখন আমি বাইরে যাই তখন কি আমি বোরখা পরি না? যখন মুদির দোকানে কেনাকাটা করতে যাই বা রাস্তায় বেড় হই তখন কি  বোরখা পরিনা?”

আমরা জানি ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব ঘটেছিল। ইরানের ইসলাম ধর্মের আইন অনুয়ায়ী নারীদের বোরখা পড়া বাধ্যতামূলক। শেষ পর্যন্ত ১৯৮১ সালে তাঁকে ইউনিভিসার্টি অব আল্লামেহ তাবাতাবেইতে বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানেও সেই একই সমস্যা। নীতিগতভাবেই এই বিষয়ে অপোষ করবেন না বলে নাফিসি তৈরি হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরীতে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত নিজ বাড়ির ড্রয়িং রুমেই তিনি খুলে বসেন একটি সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা। মাত্র সাত জন ছাত্রী নিয়ে এই সাহিত্য আড্ডার যাত্রা শুরু হয়। সেই আড্ডায় বোরখা পরেই আসতে শুরু করলেন নাসরিন, মাশিদ, ইয়াসি,মিত্র,আজিন,সানাজ এবং মান্না নামের এই সাতজন সাহিত্য প্রেমিক ইরানী নারী। তাঁরা সাহিত্য ভালেবাসেন, বাক স্বাধীনতায় তাঁরা বিশ্বাসী। তাঁরা নারী পুরুষের ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন। ধীরে ধীরে সাহিত্য আড্ডার প্রধান আলোচনার বিষয় হল পশ্চিমা সাহিত্য। সেই সাহিত্য আড্ডায় আলোচিত হত জন অস্টিন, স্কট ফিটজেরাল্ড, হেনরি জেমস এবং ভ্রাদিমির নবকোভ এর মত লেখকদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

ইরানের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নবকভের ‘ললিতা’ পড়ানো নিশ্চয়ই সহজ কোন কথা নয়? বিশেষ করে ইরানের মত রক্ষনশীল একটি সমাজে? কিন্তু আজার নাফিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ললিতা’ পড়ানোর মধ্য দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জটিকেই হাতে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন তাঁর সামনে পাহাড় সমান বাধা বিপত্তি অপেক্ষা করছে, কিন্তু কিন্তু তিনি সেই বাধাকে ভয় পাননি। প্রথম আঘাতটি আসে তারই ক্লাসেরে এক ছাত্রের কাছ থেকে। সেই ছাত্রটি ’ললিতা’ উপন্যাসটি একটি যৌনতাপুষ্ট, কুরুচিপূর্ণ এবং ইরানের সমাজের জন্যে ক্ষতিকর এই অজুহাতে মামলা ঠুকে দিলেন। এদিকে ইরানে তখন চলছে ইসলামি বিপ্লবের হাওয়া। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাড়ালো যে তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে পারলেন না। সাহিত্য পড়াতে যেয়ে নৈতিকতা আর যৌনাতকে উস্কে দেয়ার অপরাধে তাঁকে ইউনিভার্সিটি অব তেহরান থেকে বহিস্কার করা হয় এবং ইউনিভিসার্টি অব আল্লামেহ তাবাতাবেইতে বদলি করা হয়। সেখানেও তিনি বেশিদিন টিকতে পারেননি। ১৯৮৭ সালে নিজেই চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

সন্দেহ নেই ‘ রিডিং ললিতা ইন তেহরান’ অসাধারণ একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ।

ভ্লাদিমির নবকোভের ’ললিতা’ উপন্যাসটি গোটা বিশ্বেই আলোচিত। এই সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। খোদ পশ্চিমা সমাজেও এই উপন্যাসটি নিয়ে হৈচৈ কম হয়নি। কারণ উপন্যাসের চরিত্রে রয়েছে একজন মধ্য বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে একজন ১২ বছর বয়সি কিশোরীর প্রেম এবং শারীরিক সম্পর্ক। মানুষের মনের গহীন কুপে জমে থাকা জটিল রসায়নগুলো উপন্যাসটির মূল সম্পদ। লেখক আজার নাফিসির মতে তিনি উপন্যাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ দানের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে নারী স্বাধীনতা, প্রেম, সামাজিক টাবু, মানুষের মনোজগৎের জটিল বিষয়গুলো খোলামেলা আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। তবে সন্দেহ নেই গ্রন্থটি মূলত স্মৃতিচারণ হলেও সেখানে ইরানের রক্ষনশীল সরকারের নানা রকম কর্মকান্ডকেও তুলে আনা হয়েছে। তার এই স্মৃতিচারণ উঠে এসেছে ইরকা-ইরান যুদ্ধ, ধর্মীয় শাষনে বন্দী একটি সমাজ আবার পাশাপাশি উদারনীতিতে বিশ্বাসী একদল নতুন তরুণ দল, কিছু আশার আলো আবার কিছু ভয়াবহ বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্পও।

২০০৪ সালে এক ন্যাশনাল বুক ফেস্টবলে এক ভাষনে তিনি বলেন,  শুধু ইসলামিক দেশগুলোকে  দোষ দিলে চলবে না। সেই সঙ্গে এটাও সমানভাবে এর পেছনের আসল কারণগুলোকেও খুঁজে বেড় করতে হবে। আমাদের জানতে হবে কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন তারা এমন আচারণ করছে?’

খুব সুন্দর সাবলীল বর্ণনায় “রিডিং ললিতা ইন তেহরান” গ্রন্থটি পাঠ করে আপনাদের ভালো লাগবে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

Leave a Reply