You are currently viewing গ্রন্থঃ ’যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ : ১৯৭১—এ ’গঙ্গা’ হাইজ্যাক হয়েছিল’

গ্রন্থঃ ’যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ : ১৯৭১—এ ’গঙ্গা’ হাইজ্যাক হয়েছিল’

প্রকাশকঃ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ

প্রকাশকালঃ ২০১৯

গ্রন্থ আলোচনা আদনান সৈয়দ

 বাঙালি জাতির কাছে একাত্তর সালের প্রতিটা দিন এবং ক্ষন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ এর দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের ফসল আজকের বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ভুখন্ড। এই ভুখন্ড লাভ করতে যেমন অনেক রক্ত ক্ষয় হয়েছে পাশাপাশি এই যুদ্ধের আড়ালেও হয়েছে অন্যরকম আরেক যুদ্ধের ইতিহাস। সে যুদ্ধ কখনো ছিল কূটনৈতিক কখনো তা সংঘটিত হয়েছিল বাংলা থেকে বিবর্জিত সম্পূর্ণ ভীন্ন আলো হাওয়ায় ভিনদেশের কোন মাটিতে । যুদ্ধ বলতে আমরা আমাদের মানসপটে যে ধারণাটি লালন করি তা হল একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধকে আমরা স্পষ্ট করে দেখতে পাই কিন্তু  কুটনৈতিক যুদ্ধকে আমরা দেখতে পাই না। সে যুদ্ধটি চলে মূল যুদ্ধের সমান্তরালভাবে খুব কৌশলে। সে যুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় পরাশক্তি অংশ গ্রহণ করে। সে যুদ্ধে যোগ দেয় জাতিসংঘ, যোগ দেয় বিশ্বের বড় বড় কূটনৈতিকবৃন্দ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও ঠিক এমনি একটি যুদ্ধ যে যুদ্ধে গোটা পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছিল। একটি পক্ষ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আরেকটি পক্ষ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে আবার ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন পক্ষ নিয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষে। সেই কূটনৈতিক যুদ্ধেও বাংলাদেশের জিত হয়েছিল। কিন্তু কীভাবে তা সম্বভ হয়েছিল! সে আরেক বিরাট ইতিহাস। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে এই গ্রন্থের মূল নির্যাস। আরেকটি বিষয় হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে বাংলাদেশের বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক জনমত তৈরি হয়েছিল। অনেক অচেনা অজানা শান্তিপ্রিয় মানুষ খুব নীরবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।  অথচ যথাযথ প্রচার এবং অজ্ঞতার কারণে তাদের অনেকের নাম, ঠিকানা আমরা তেমন ভালো করে জানিও না। লেখক হাসান ফেরদৌস মুক্তিযুদ্ধের পেছনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার উপর আলো ফেলেছেন এবং তা সুনিপুনভাবে গ্রন্থের পাতায় চিত্রিত করে বিপুল দক্ষতার সঙ্গে তা  ফুটিয়ে তুলেছেন।  ’যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধঃ ১৯৭১—এ ’গঙ্গা’ হাইজ্যাক হয়েছিল’ গ্রন্থটি এরই উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করছে।

এবার গ্রন্থের ভেতর প্রবেশ করা যাক। মোট ৯৫ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে মোট ৮টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধগুলো হল ১) ১৯৭১—এ ’গঙ্গা’ হাইজ্যাক হয়েছিল ২) একাত্তরের সোভিয়েত বন্ধু, ৩) ’পদ্মা’ অবরোধ, ৪) একাত্তর ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ৫) একাত্তরের সহযোদ্ধা ৬) পাকিস্তানের হাতে রক্তের দাগ ৭) আর্চার ব্লাডঃ একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং ৮) বিস্মৃতির বিরুদ্ধে লড়াই। গ্রন্থে সন্নিবেশিত সবকটা প্রবন্ধই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার বয়ান। গ্রন্থটির নাম দেখে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে লেখক  ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ধারণ করে এই গ্রন্থের অবতারনা করেছেন। লেখক হাসান ফেরদৌস এর ভাষা ঝরঝরে। তিনি মূলত প্রবন্ধ লিখেন এবং তাঁর লেখার একটি অন্যতম দিক হল অনেক কঠিন এবং জটিল বিষয়কেও তিনি সাবলিলভাবে এবং অনেক সরলভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেন। যে কারণে হাসান ফেরদৌস এর লেখা পাঠকের কাছে সুখপাঠ্য হতে বাধ্য হয়। আমাদের আলচ্য এই বইটিও এর ব্যাতিক্রম নয়। গ্রন্থটিতে সংযুক্ত প্রতিটা প্রবন্ধের বিষয় বেশ কুটনৈতিক এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রভাবিত করে লেখা। লেখক অনেক মুন্সিয়ানার সঙ্গে এই জটিল বিষয়গুলোকে সহজ সরল ভাষায় পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। এটি লেখকের যেমন একটি নিজস্ব গুণ পাশাপাশি পাঠকের জন্যেও তা এক পরম পাওয়া।

এবার গ্রন্থের  প্রবন্ধগুলোর উপর চোখ রাখা যাক। বেশ বোঝাই যায় গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ’১৯৭১—এ ’গঙ্গা’ হাইজ্যাক হয়েছিল’ শিরনামটি বইটির নামকরনের জন্যে উপশিরনাম হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। এই প্রবন্ধটির মূল বিষয়ও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালে আশরাফ কুরেশি ও তাঁর চাচাতো ভাই হাশিম কুরেশি ’গঙ্গা’ নামের ভারতীয় এয়ারলাইনসের একটি ফোক্কার ফ্রেন্ডশিপ বিমান শ্রীনগর থেকে হাইজ্যাক করে লাহোর নিয়ে যায়। এই বিমান হাইজ্যাককে কেন্দ্র করেই এই প্রবন্ধের সূত্রপাত। কেন এই বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছিল? এর পেছনে কী ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ ’র’ এর পরোক্ষ কারসাজি ছিল নাকি কাশ্মির এর স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করতে এটি করা হয়েছিল? ঘটনা যাই থাকুক না  পরবর্তীতে দেখা যায় এই বিমান হাইজ্যাকের কারণে বাংলাদেশের মুি্ক্তযুদ্ধ অনেকাংশে উপকৃত হয়েছিল। শুধু তাই নয় এই হাইজ্যাকের কারণে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রত্যক্ষ্য এবং পরোক্ষ প্রভাব পরেছিল। ১৯৭১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী ভারত সরকার তাদের আকাশসীমার উপর দিয়ে পাকিস্তানি বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফল হিসেবে ৭১ এর যুদ্ধে পাকিস্তান বিমান ভারতের আকাশসীমা পেরিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বিমান চলাচল করতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। হাসান ফেরদৌস লিখছেন,

 ” পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যদি পূর্ব পাকিস্তানের সরাসরি যোগাযোগ ব্যাহত হয়, তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানের হাত আরো শক্ত হয়, একথাও বলা শুরু হয়”(পৃষ্ঠা—২৫)”

খুব সুখপাঠ্য এবং চমৎকার এই প্রবন্ধটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আড়ালে এক অসাধারণ গল্পকেই মূলত তুলে ধরা হয়েছে। আমরা জানি এমন অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে যা প্রকৃত চর্চার অভাবে এবং তথ্যের অভাবে অনেক সময় আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। সন্দেহ নেই লেখক হাসান ফেরদৌস আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তল থেকে এই দলিলগুলো একজন ঝানু ডুবুরির মতই আমাদের জন্যে তুলে এনেছেন।

’একাত্তরের সোভিয়েত বন্ধু’ প্রবন্ধটিরে কথাই ধরা যাক। গোটা প্রবন্ধটিই একটি যুদ্ধের আড়ালে আরেক যুদ্ধের গল্প। সে যুদ্ধটি কূটনৈতিক যুদ্ধ। ৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময় আমেরিকা এবং চীন প্রত্যক্ষভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ নেয় বাংলাদেেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভীন্নখাতে প্রবাহিত করতে এই দেশদুটো অন্যরকম ষড়যন্ত্র নিজেদের যুক্ত করে। সে সময় জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনোয়িনের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন ইয়াকফ মালিক এবং ভারতের জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি বাঙালি কূটনীতিক সমর সেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের ন্যায়সংগত দাবীর প্রতি তাদের আকুন্ঠ সমর্থন দেন। আমেরিকার অবস্থান, চিনের পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন এবং একই সঙ্গে ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়া সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাগুলোর অসাধরণ প্রাঞ্জল ভাষায় এই প্রবন্ধের প্রতিটা শব্দে ফুটে উঠে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের কোন প্রতিনিধি যাতে বক্তব্য রাখতে না পারে সে জন্যে আমেরিকা এবং পশ্চিম পাকিস্তান তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পরেছিল। বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বিতর্কে অংশগ্রহনের পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূত সমর সেন বলেছিলেন,

 ” বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এই প্রশ্নে আলোচনা হবে প্রিন্স অব ডেনমার্ককে বাদ দিয়ে হ্যামলেট নাটকের অভিনয়”।(পৃষ্ঠা—৪৪)

গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে আলোচিত গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটা প্রবন্ধেরই নিজস্ব একটি স্বাতন্ত্রতা রয়েছে কিন্তু একই সঙ্গে প্রতিটা প্রবন্ধ যেন গভীরভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্তও। যে কারণে গ্রন্থের প্রতিটা নিবন্ধ ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি প্রবন্ধ ’পদ্মা’ অবরোধ’ এর দিকে  দৃষ্টি দেওয়া যায়। ৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা তখন তুঙ্গে। পশ্চিম পাকিস্তান তাদের সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশে বর্বর হত্যাকান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই হত্যাকান্ডের পেছনে অর্থায়ন এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগীতার পেছনের মূল হোতা যুক্তরাষ্ট্র। ২৫শে মার্চের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সব রকম সহযোগীতার খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। ঠিক এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ’পদ্মা অবরোধ’ নিবন্ধের অবতারণা। জানা যায় ১৯৭১ সালে জুলাই ১১ তারিখ ’পদ্মা’ নামের একটি পশ্চিমা পাকিস্তানি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর বন্দরে নোঙর করবে। উদ্দেশ্য আমেরিকা থেকে  অস্ত্র বোঝাই করে জাহাজটি আবার পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। কিন্তু বাল্টিমোরের সাধারণ মানুষ এই খবরটি গোপনে জেনে ফেলে। ফিলাডেলফিয়ায় আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটির রিচার্ড টেইলার এর নেতৃত্বে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌছায়। তারা পরিকল্পনা আটে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে সবাই মিলে ’পদ্মা’ নামের জাহাজকে অবরোধ করে দিবে এবং  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের  প্রতি তাদের নৈতিক সমর্থন জানাবে। তারপর অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ডিঙি নৌকা দিয়ে যথারিতি ’পদ্মা’কে ঘিরে ফেলা হল। যদিও বিষয়টি অনেকটাই প্রতীকী তারপরও এই ঘটনা গোটা আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছিল এবং আমেরিকার সাধারণ মানুষ এতে উদবুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদ যে কোন দেশ থেকেই করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ শান্তিকামী মানুষও পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায় এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস পশ্চিম পাকিস্তানকে এই অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ যেন না করতে পারে সেই আইন পাশ করে।

”১৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি উদ্বাস্ত ভারত থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার আগে পাকিস্তানকে সব ধরনের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগীতা বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন করে।”পৃষ্ঠা—৫৯

একইভাবে ’একাত্তর ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলন’ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ। একটি দেশ যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন সেই দেশটির জন্যে অন্য কোন দেশের স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। আর সেই দেশটি যদি কোন বড় পরাশক্তি হয় তাহলেতো কথাই নেই। বাংলাদেশে যখন যুদ্ধ চলছে তখন প্রথম বাংলাদেশের এই যুদ্ধ যে একটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন তা সর্বপ্রথম উল্লেখ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। সন্দেহ নেই ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ অনেক বেগবান হয়েছিল।  কীভাবে, কেমন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারত এই দুই দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন বলে গণ্য করেছিল লেখক হাসান ফেরদৌস তাঁর এই গ্রন্থটিতে তা অত্যান্ত নিপুনভাবে তুলে এনেছেন।

 ” ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ যকন স্বাধীনতা প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে, মুক্তিযুদ্ধে মরণপ লড়াইয়ে লিপ্ত এই দেশটির প্রতি তাঁর দেশের সংহতি প্রকাশ করে একথা বলেছিলেন জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থায়ী প্রতিনিধি ইয়াকফ মালিক। সেই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ফোরামে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যে একটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন, তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। পৃষ্ঠ—৬০”

এভাবে প্রতিটা প্রবন্ধ ধরে ধরে  আলোচনা করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়েছে গ্রন্থটিতে বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো অত্যান্ত সুন্দর আর নিঁখুত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। যে কারণে গ্রন্থের প্রতিটা প্রবন্ধই সুখপাঠ্য এবং একটি প্রবন্ধ পড়া শুরু করলে তা আর শেষ না করে উঠার উপায় থাকে না। অনেক সময় মনে হয়েছে আমি বুঝি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর সাদা কালোয় নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখছি। এখানেই লেখকের কৃতিত্ব।

এ ধরনের গ্রন্থ বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক বেশি প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেও মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধের আড়ালের নানা রকম ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্রকে অনেক তথ্য এখনো আমাদের অগচোরে রয়ে গেছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের আত্মায় লালন করতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও সমানভাবে ধারণ করতে পারে তখন ’যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ ১৯৭১—এ ’গঙ্গা’ হাইজ্যাক হয়েছিল’ এই ধরনের গ্রন্থগুলো পাঠ খুব জরুরী পরে।

লেখক এবং প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌসকে অভিনন্দন এবং সাধুবাদ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলো ফেলার জন্যে।

গ্রন্থের প্রকাশক ’ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’কে ধন্যবাদ। এ ধারা অব্যহত থাকুক। সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন প্রচ্ছদটি করেছেন মামুন হোসাইন। 

Leave a Reply