You are currently viewing গ্রন্থের নাম নানা রবীন্দ্রনাথের মালা

গ্রন্থের নাম নানা রবীন্দ্রনাথের মালা

লেখক পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়

প্রকাশক আনন্দ পাবলিশার্স

প্রচ্ছদ করেছেন অমিয় ভট্টাচার্য।

গ্রন্থ পরিচিতিঃ আদনান সৈয়দ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কাছে এক অপার বিস্ময়! এক জীবনে তাঁর এত এত দীপ্তি, এত এত পরিচয়, এত এত কাজ! ‘কীভাবে সম্ভব?’ আর লেখালেখি বা শিল্প চর্চাই শুধু নয়! কখনো কখনো তিনি সংগঠক, কখনো শান্তিনিকেতনের জন্য অর্থ জোগার করতে তাঁকে তাঁর নাটকের দলবল নিযে পৃথিবীর নানা দেশে যেতে দেখা যাচ্ছে। থেকে দেশান্তরে। যাচ্ছেন  ইউরোপ- আমেরিকায়, দক্ষিণ আমেরিকায়, রাশিয়া এমনকি মুলোলিনির ইতালি অব্দি! এক জীবনে এত কিছু কীভাবে সম্ভব? রবীন্দ্রনাথের জীবনে এত এত কর্ম নিয়ে একটি মালা বানানো যেতেই পারে!

 এই চেনা অচেনা রবীন্দ্রনাথ তাঁর অপরূপ মালা গেঁথে তিনি যেন ঠিক পাঠকের সামনে বসে আছেন। সেই মালা দিয়ে এই গ্রন্থটি সাঁজিয়েছেন লেখক পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর মোট ১২টি প্রবন্ধ নিয়ে এই গ্রন্থ। ১২টি লেখায় রবীন্দ্রনাথকে ১২ রকম ভাবে দেখার সুযোগ ঘটবে। প্রবন্ধগুলোর নাম শুনলে হয়তো পাঠক কিছুটা গ্রন্থটি সম্পর্কে অনুমান করতে পারবেন।

১) জন্মদিন আসে বারে বারে( রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে তাঁকে উৎসর্গ করে এই লেখা। ২) রবির কপালে পড়ল ফোটা। ৩) কলোকী পুলোকী, ৪) খামখেয়ালী সভার প্রতিবেদক-রবীন্দ্রনাথ, ৫) বীরভূমে দুর্ভিক্ষ ও রবীন্দ্রনাথ, ৬) কৃষাণের জীবনের শরিক যে জন. ৭) অজানা অচেনা দূতী, ৮) যা দেখেছি যা পেয়েছি, ৯)উপহার-রবীন্দ্রনাথকে, ১০) স্বল্পজাত মানস মহাদেশের খসড়া, ১১) রোগশয্যার ছড়া এবং ১২) শান্তিনিকেতন থেকে শেষযাত্রা।

লেখককে নিয়ে দুটো কথা এই সুযোগে বলছি। তিনি পঁচিশ বছর ধরে শান্তিনিকেতনের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার আগে দশ বছর ছিলেন বিশ্বভারতীর ছাত্র । খুব স্বাভাবিকভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তিনি খুব কাছ থেকে জানতে পেরেছেন এবং দেখারও সুযোগ পেয়েছেন।  সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এই গ্রন্থের সৃষ্টি। উল্লেখ্য যে এই গ্রন্থে প্রকাশিত প্রতিটি লেখাই সাগরময় ঘোষ সম্পদিত ‘দেশ’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

‘খামখেয়ালী সভার প্রতিবেদক-রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধটি থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি।  “আমার জ্যাঠামহাশয়দের আমলে ছিল ‘বিদ্বজ্জন সভা’। বাবার আমলে তারই রূপান্তর হল ‘খামখেয়ালী সভা’।  ‘খামখেয়ালী সভা’ যখন আরম্ভ হয় তখন আমি একটু বড় হয়েছি। তাই এই বৈঠকের বিষয় স্পষ্ট মনে আছে। এই সভার কোনো নিয়মকানুন ছিল না। পনেরো-কুড়িজন বন্ধুবান্ধব মিলে এই সভা। বাবা ও বলুদাদার উৎসাহে এর প্রতিষ্ঠা হয়। সভ্যশ্রেণীভুক্ত হবার কোনো নিয়ম না থাকলেও লেখক কবি শিল্পী সংগীতজ্ঞ ও অভিনেতাদের নিয়েই সভা গঠিত হয়।(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পিতৃস্মৃতি’ থেকে)”

 আবার এই গ্রন্থপাঠে জানা যায় ১৮৮৫ সালে বীরভূমের ভয়ানক দূর্ভিক্ষ হয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে তৎকালীন ৫০০ টাকা দান করা হয়েছির। এই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘ অধিক দূরে নয়, তোমাদের দ্বারের নিকট ক্ষুধিতেরা দাঁড়াইয়া আছে। তোমরা দুইবেলা যে উচ্ছিষ্ট অন্ন কুক্কুর বিড়ালদের ফেলিয়ে দিতেছ, তাহার প্রতি তাহারা কি কাতরদৃষ্টিতে চাহিয়ে রহিয়াছে।’ এই প্রবন্ধটিতে মানবহিতৈষী রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথের কৃষিকর্মের উপর বিস্তর আলোচনা হয়েছে। উন্নত মানের আলু, মাদ্রাজী সরু ধান কিংবা আমেরিকান ভুট্টাচাষের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কবিগুরু ছিলেন নিবেদিত একজন কৃষক।

গ্রন্থটি পাঠে নানা ভাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে আবিস্কার করবেন বলেই আমার ধারণা।

Leave a Reply